আকাশ যত দূরেই থাক জানালা খুলে দিলে ঘরে আসে চাঁদ, সমুদ্র যত দূরেই থাক দুঃখ পেলে পাবে নোনাজলের স্বাদ।
সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১১
শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১১
ইহা একটি ভালবাসার গল্প
আমরা কখনো করি নি শীৎকার
সঙ্গম আশ্লেষে
আমাদের প্রেম প্রতিজ্ঞা কেবলই
দীর্ঘশ্বাসে মেশে...
ডার্ক-১
তখন তারা মৈথুনে। অভ্যন্তরে সত্তুর ভাগ জল, তারা স্নানশীল সেই নোনাতরলে, যেন সমুদ্র ঢেউয়ে অবগাহন, প্রগাঢ়, মুগ্ধ ও বৃষ্টি-সম্ভাবনার। দূরের মহাসড়কে তখনই বাস বা ট্রাকের চাকা হয়তো বার্স্ট হয়, বা কোথাও বোমা ফাটে, বা কেউ গুলি করে; বিকট একটা শব্দ রাতের নিরবতাকে ছিঁড়ে কাঁপতে কাঁপতে এ পর্যন্ত চলে আসে। রাত জাগা কী একটা পাখি বাদুর বা পেঁচা উড়ে যায়; কলাগাছের পাতা কাঁপে। কিন্তু তারা এসব টেরও পায় না। ক্রমে তারা ডুবে যায়, ডুবতে থাকে; তাদের পাতালমুখি অভিযান একাগ্রচিত্ত। অথচ মণ্ডলবাড়ির উঠোনে চার পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকা নেড়ি কুত্তাটা জেগে ওঠে; এদিক ওদিক চায় , এক দুবার ঘেউ ঘেউ করে, তারপর আবার যেভাবে শুয়ে ছিল সেভাবেই চার পা ছড়িয়ে দেয়।
কলাগাছের ওপাশে আঁধারটা যেখানে আরো ঘন হয়ে আরো একটু আড়াল তৈরি করে, সেখান থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ছাপিয়ে কিছু শব্দ উচ্চকিত হয়। তার সঙ্গে সাপের ফোঁসফোঁসের বা বেজির হিসহিসের কিংবা মানুষের শীৎকার আশ্লেষের ধ্বনিগত মিল থাকলেও থাকতে পারে।
ডার্ক-২
ঘাস খাওয়ার সময় গরুগুলিকে মনে হয় শান্ত। গায়ের উপর শালিক বা ফিঙে এসে বসলেও কিছু বলে না; দু একবার লেজ নাড়ায়, এবং সেটাও যে শালিক বা ফিঙে তাড়াবার জন্যে তা মনে হয় না, মনে হয় যেন আদর করে। জুবেরী ভবনের মাঠে যে গরুগুলো ঘাস খায়, তাদের ঘাড়ের উপর শালিক বসে বিশ্রাম করে। তখন জুবেরী ভবন রোদরোদ্দুররোদেলায় চোখের পাতার মতন কাঁপে। চারদিকে ছড়িয়ে থাকে ঘন নির্জনতা। এই নির্জনতা ভেঙে দেয় রিকশাঅলাটির বেলের টুংটাং শব্দ। জুবেরী ভবনের পাশ দিয়ে প্যারিস রোড কাজলা গিয়ে মেশে। রিকশাঅলাটি প্যারিস রোড ধরে রিকশার বেল বাজাতে বাজাতে চলে যায়। আর প্যারিস রোডের পাশেই যে জায়গাটা ভাঁটফুলে জংলা হয়ে থাকে, সেখানে হয়তো একটা সাপ ব্যাঙ গেলার চেষ্টা করে। রিকশাঅলাটি বেল না বাজালে সে-ও হয়তো শুনতে পেত সাপের মুখে ব্যাঙ যন্ত্রণায় কো কো করে। অথচ তারও কাছে বাউন্ডারিওয়াল লাগোয়া ছাতিম গাছের নিচে বসে থাকে যে একজোড়া তরুণ-তরুণী তারা ব্যাঙের কান্না শুনতে পায় না। তখন তারা বোধলুপ্ত হয়, কেননা তাদের দুটো শরীর একটা ছায়া তৈরি করে। মিশে যেতে যেতে তখন হয়তো তরুণটির ভেতরে জ্বলে ওঠে আগুন আর তরুণীটি মোম হয়ে যায়। আগুনের উত্তাপে মোম তো গলবেই।
ফোকাস-১
লোকটাকে দেখে জেলে মনে হবে না। কিন্তু সে জাল নিয়ে মাছ ধরতে আসে। দ্বারিয়াপুর বিলের মাঝখানে পানি নিষ্কাশন খালে তখন হয়তো পানি তেমন থাকে না। অল্প পানিতে কিইবা আর মাছ থাকবে! তবু লোকটার হয়তো অন্য কোন কাজ থাকে না, বা যাই হোক কিছু মাছ ধরে অন্য কাজে যেতে চায়; বা লোকটা হয়তো ভাবে একবেলার মাছ হয়ে গেলেও কিছু টাকা তো অন্তত বাঁচবে! সে যখন মাছ ধরতে আসে তখনও কিছু অন্ধকার ছড়িয়ে থাকে ক্যানেলের আশপাশটায়। তারপর রঙের ক্রান্তিকালে, রাতের মধ্যে দিন এসে পড়লে যে অপার্থিব আলোর সৃষ্টি হয়, সেই প্রপঞ্চ আলোয় লোকটা কিছু একটা দেখে। আরো একটু এগোলে সে আবিষ্কার করে ঘাসের উপর ফুটফুটে নবজাতক শুয়ে থাকে। তখনও হয়তো শিশুটির মধ্যে ছোট প্রাণ ধুকপুক করে। এই ধুকপুকানি লোকটির মধ্যেও ছড়িয়ে পড়লে সে সকালে তার আর মাছ ধরা হয় না। সে বাড়ি ফিরে যায়। ফেরার পথে গ্রামের দিক থেকে আসা সম্মিলিত একটা কান্নার ধ্বনি তার চলার গতিকে দ্রুতগামী করে।
হাফিজউদ্দিন মোড়লের বড় মেয়ে সুলতানা সেই সকালে আত্মহত্যা করে, এই খবর সকাল সাতটার মধ্যেই রাষ্ট্র হয়ে যায়।
ফোকাস-২
ক্লিনিক। ওষুধ ওষুধ গন্ধ চারদিকে। সে বসেছিল প্লাস্টিকের একটি মোড়ায়। এই ক্লিনিকের নাম মুক্তি ক্লিনিক। তার মনে হয়, মেয়েদের আপদ থেকে মুক্ত করে বলেই হয়তো এর নাম মুক্তি ক্লিনিক, বা সে ভাবে, মানুষ শুধু নিজেরটাই দেখে; এমনও হতে পারে, ক্লিনিকের মালিকের ছেলে বা মেয়ের নামে হয়তো এর নামকরণ করা হয়। তখন শাদা পোশাক অল্পবয়সী নার্স মেয়েটি এসে তাকে বলে- আপা আসেন।
তারও ঘণ্টা দুয়েক পরে সে যখন ক্লিনিক থেকে বেরোয়, তখন নিজেকে হয়তো তার মুক্ত মনে হয়; কিন্তু হাঁটতে গিয়ে বোঝে দুর্বলতা কাটতে আরো কিছু সময় প্রয়োজন।
ডার্ক-৩
সূর্য অনেকক্ষণ আগেই হয়তো ডুবে যায়; কেননা রাস্তার বাতিগুলো জ্বলে ওঠে। তারা বাতি রাস্তায় হাঁটে না। তৃতীয় বিজ্ঞানভবনের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা বোটানিক্যালের দিকে চলে যায়, সেই অন্ধকার রাস্তায় তারা ঘনিষ্ট হয়; কতটা নিবিড় অন্ধকারে বুঝা যায় না। কিন্তু ছেলেটির হাত জার্নি শুরু করলে মেয়েটি হেসে দূরে যায়। যাঃ
অতঃপর মেয়েটি তার পার্সের চেইন খোলে।
তুঁতবাগানের পাশে জুয়োলজি ডিপার্টমেন্টের পুকুরে পানি অনেক। তবুও এ পুকুরে কোনদিন কাউকে গোসল করতে দেখা যায় নি। এখানে বিদেশের উন্নতমানের চিতাদের বা রাজাদের ভেসে বেড়াতে দেখা যায়।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যসমূহ (Atom)